কিছু যুগ আগের কথা।আমাদের বিশ্বের একটি দেশে এক সময় একটি ছেলে বাস করত। তার নাম তাইজু।তার বয়স কুড়ি বছর। তাইজুর বাবা মা ছিল না ছোটবেলা থেকেই। সে একা বাস করত। একদিন তাইজু রাস্তা দিয়ে একা একা হেঁটে যাচ্ছিল।হঠাৎ সে দেখতে পেল যে একটি লোক তার দিকে ছুটে আসছে। লোকটি তার কাছে এসে তাইজুর থেকে সবকিছু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল।তাইজু লোকটিকে আটকানোর চেষ্টা করল কিন্তু আটকাতে পারল না। সেই লোকটা তার পেটের মধ্যে সোজা এক ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে দিল। তাইজু আর্তনাদ করে রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়ল,সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে লোক জড়ো হয়ে লোকটিকে চেপে ধরল এবং রাস্তার ধারে বেঁধে রেখে পুলিশকে খবর দিলো। এদিকে কিছু লোক তাইজু কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাইজুকে বাঁচানো গেল না,সে শেষে মারা গেলো ।
মারা যাওয়ার আগে তাইজু র চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছিল, আস্তে আস্তে তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। চোখ খুলতেই সে দেখল সম্পূর্ণ আলাদা, অচেনা কোনো জগতে সে জন্মেছে। এরকম কোনো জায়গা পৃথিবীতে আছে সে তা বিশ্বাস করতে পারছে না।যদিও কোন এক জাদুবলে তার আগের জন্মের কথা মনে আছে।তার মনে হচ্ছে সে যেন বেশ কিছু বছর পিছনে চলে গেছে। তাইজু আস্তে আস্তে নিজের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে থাকলো। সে বুঝলো যে সেই পৃথিবীতে তার মৃত্যু হয়ে গেছে এবং সে আবার জন্ম নিয়েছে এক অন্য জগতে। তাইজু বুঝতে পারলো যে তার পরিবার খুবই উচ্চবিত্ত স্তরের পরিবার। সে হলো একটি বিশাল সাম্রাজ্যের রাজার ছেলে। এই সময় তার নাম হলো ইজান।সে তার এই নতুন জগতের বিষয়ে আরো কিছু অনুভব করতে পারলো। ইজান জানতে পারলো যে এই নতুন জগতে এমন কিছু প্রাণী এবং ভয়ংকর হিংস্র জন্তু-জানোয়ার আছে যাদেরকে তার পুরনো পৃথিবীতে কোথাও পাওয়া যেত না। এছাড়াও এই জগতে সব মানুষের মধ্যে এক মায়াবী শক্তি বাস করে। তারা নানান ভাবে তাদের ভিতরে থাকা এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারতো। রোজকার সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে লড়াই এবং যুদ্ধ সবকিছুতেই এই শক্তির ব্যবহার করত এই জগতের মানুষরা।
এই জন্মে ইজান ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব মনোযোগ দিতো। জাদু শিক্ষায় তার দক্ষতা ছিল সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক বেশি। এসব কারণের জন্য ছোটবেলা থেকে সবার আদর যত্নতে বড় হতে লাগলো।ইজান পড়াশোনা, যাদুবিদ্যা,সব বিষয়েই সবকিছুতে এগিয়ে থাকতো। ইজানের মা বাবা ও রাজ্যের সাধারণ লোকজনেরা সকলেই তার অকাল তত্ত্ব জ্ঞানী রূপ দেখে অবাক হত এবং তার প্রতি গর্ববোধ করত।
একদিন ইজান বাগানে খেলা করছিল একা একা।খেলতে খেলতে তার বাগানে একটি হিংস্র জানোয়ার ঢুকে পড়ে তার কাছাকাছি। সেই মুহূর্তে কোন প্রহরীই ধারেকাছে ছিল না। তার মা বাবা এসে দেখে যে সে একা হাতে সেই জন্তুটিকে বধ করেছে। ওই জন্তুটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাণী ছিল যাকে অনেক যোদ্ধাই হারাতে পারে না সেখানে একটি বাচ্চা ছেলে কী করে ওকে হারিয়ে দিলো সেটা ভেবে তার মা- বাবা সত্যিই অবাক হয়ে যায়। সেই জানোয়ারটির শরীরের অনেক্ অংশই আসলে অমূল্য ছিল । ইজানের মা-বাবা সেগুলো বিক্রি করে দেয়। দাম হিসাবে উঠে আসে সহস্র সহস্ৰ স্বৰ্ণ মুদ্রা। এইসব স্বর্ণমুদ্রা তার মা বাবা তাকে দিয়ে দেয় সম্পূর্ণরূপে। ইজনের বয়স তখন ১০ বছর। তার মা-বাবা সিদ্ধান্ত নেয় যে তাকে তাদের রাজ্যের রাজধানীর একটি খুব উচ্চ স্তরের বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠাবে। তার মা-বাবা তাকে বলল যে সে এখন বড় হয়েছে এবং তাদের মনে হয়েছে যে সে নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারবে। রাজধানীতে গিয়ে তার খরচ চালাবার জন্য তার মা বাবা তাকে ঐ সব স্বর্ণমুদ্রার ব্যবহার করতে বলে।
এরপর ইজান ভর্তি হল রাজ্যে সবচেয়ে উচ্চস্তরের এক বিদ্যালয়ে। তার ছাত্র জীবন অতি সহজ সরল ভাবেই কেটে যাচ্ছিল। বিদ্যালয়ে তার বেশ কয়েকটি বন্ধু হয়েছিল, এবং তারা ইজনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।তারাও ইজানকে নিজের অন্যতম প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে মনে করত। এইভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর। শিক্ষা শেষে ইজানের মা বাবা রাজধানীতে এলেন তার পড়াশোনা কেমন চলছে তা দেখবার জন্য। তারা এসে দেখলেন তাদের ছেলে অত্যন্ত ভালো ভাবেই তার শিক্ষা সমাপ্ত করেছে। শিক্ষক শিক্ষিকারা তার চরিত্রের খুব প্রশংসা করতে লাগলেন। ইজান একটি উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসা সত্ত্বেও সাধারণ ছেলে মেয়েদের সঙ্গে খুব ভালো ও নমনীয় ব্যবহার করতো।সে সাধারণ ঘরের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পক্ষপাতমূলক ব্যবহার করতো না এবং কখনোই নিজের বংশ সম্পর্কে অহংকার দেখাতো না। এইসব কারণের জন্য প্রত্যেকটি শিক্ষক-শিক্ষিকা ইজানকে খুব ভালবাসত । এবং তার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি অনেক যোদ্ধাকেই ছাপিয়ে গিয়েছিলো খুব কম বয়সেই । স্কুলের বাকি ছাত্ররাও তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হতো প্রত্যেক দিন।ইজানের বাবা মা তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপহার হিসেবে একটি তলোয়ার দিলেন যার উপর নানা রকমের বহুমূল্য হীরে রত্ন বসানো ছিল এবং নিচের অংশটি ছিল সোনার। তলোয়ারটা তৈরি ছিল মিস্ত্রিল নামক একটি পদার্থের যা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং টেকসই কারণ এই তলোয়াড় এক বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল। ইজান উপহারটি পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলো।
এইভাবেই ইজান ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। তার জীবনে সবকিছু নির্দ্বিধায় হয়ে যাচ্ছিল এবং সে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিল।কিন্ত সে সুখ বেশিদিন রইলো না। ইজানের বয়স তখন ২০ বছর। প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা একটি অত্যন্ত স্বার্থপর লোভী এবং নীচ চরিত্রের লোক ছিলেন। তার ঐশ্বর্য, সম্পত্তি এবং জমির লোভ ছিল প্রচন্ড। শেষমেষ এই হিংসুটে রাজা সিদ্ধান্ত নিল যে সে তার প্রতিবেশী রাজ্য মানে ইজানের রাজ্য দখলের জন্য যুদ্ধ করবে। সে এত স্বার্থপর এবং হিংস্র ছিল যে তার মাথায় একবারও এই চিন্তা আসেনি যে যুদ্ধ হলে কত লোকের প্রাণ যাবে। তার কাছে তার ঐশ্বর্য,সম্পত্তি এবং জমি সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছিল। তার রাজ্যের মানুষরা প্রত্যেকদিন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাতো। শেষমেষ এক প্রচন্ড যুদ্ধ লাগলো দুই দেশের মধ্যে। শুধু সৈনিকদের গর্জন এবং তাদের একে অপরের অস্ত্রের আওয়াজ শোনা যেতে লাগল বাতাসে। ইজান ও তার দেশের সৈনিকরা খুবই দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করলো। ইজান তার বিশেষ শক্তিশালী তরবারি দিয়ে ও তার জাদু বিদ্যার সাহায্যে শেষমেষ প্রতিবেশী রাজ্যটিকে যুদ্ধে পরাজিত করলো। ইজানের তরবারির আঘাতে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা যুদ্ধে মারা গেলো। জন্ম হলো একটি নতুন সাম্রাজ্যের। যুদ্ধের পর চারিদিকে ইজানের জয়জয়কার হতে লাগলো। প্রজাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তার বাবা ইজানকে এই নতুন সাম্রাজ্যের রাজা ঘোষণা করল। এই জন্মে এভাবেই ইজান নতুন সাম্রাজ্যের রাজা হয়ে সুখের সমৃদ্ধিতে জীবন
যাপন করতে লাগলো।
অঙ্কুশ পাল
নবম শ্রেণি, ‘খ’ বিভাগ
Leave a Reply