শুভ স্কুল থেকে বাড়ি এসে, কোনরকমে ব্যাগটা রেখে, খাবার নাকে-মুখে গুঁজে খামারে ছোটে।
সেখানে যে তাদের ধান ঝাড়া চলছে। শুভর খুব ভালো লাগে ধান ছাড়া দেখতে – এত্ত মানুষ একসাথে ধান ঝাড়ে, খড়ের পালা বাঁধাই করে, খড়-কুটো জমিয়ে রাখে। এই মুহূর্তে চুপি চুপি একটা কথা বলে রাখি, শুভ র শুধু এসব দেখতেই ভালো লাগেনা, এসব কাজে নিজেকে সামিল করতে আরো ভালো লাগে। কিন্তু নিজের মনের ইচ্ছে সে পূরণ করতে পারে কই! তার বাবার যে কড়া নির্দেশ – একটা ধানের আঁটিতেও যেন শুভর হাত না পড়ে, তার বদলে সে যেন বাড়ি গিয়ে পড়তে বসে। কিন্তু শুভর যে হাত নিশপিশ করে, তা কি আর করা যাবে!
হঠাৎ শুভ দেখে যে তার বাবা গরুর গাড়ি নিয়ে মাঠে যাচ্ছে ধান আনতে। এবার আর তাকে পায় | কে! আর তো তাকে বারণ করার কেউ নেই; সে মনের আনন্দে তার কাকার সাথে ধান পিটোতে শুরু করে। মনে তার অন্যরকম আনন্দ, এ আনন্দ যেনো সবকিছুর থেকে আলাদা; সবাই বুঝবে না,শুভর মত গ্রামে যাদের বাড়ি, যাদের বাড়িতে ধান ঝাড়ার কাজ চলে, সেই একমাত্র বুঝবে। শুভ ধান পিটোচ্ছে, আর কাকাকে বলছে
“দেখো কাকা, আমি তোমাদের মত বড় হয়ে গেছি আমিও পারছি।”
শুভ একবার ধান পিটোয়, একবার ধানের আটি বয়ে এনে কাকাকে দেয়, একবার জড়ো করে রাখা খড়কুটো বোঝার উপর উঠে মনের সুখে লাফায়। তার যে আর কোন দিকে খেয়াল নেই, সে | জানেইনা, কখন সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, তার বাবা চলে এসেছে ধান নিয়ে।
তার বাবা এসে দেখে খড় কুটোর বোঝার উপর শুভর মনের আনন্দে ঝাপানো। তিনি শুভ কে বারণ করেছেন এসব করতে, কারণ তিনি চান না তার ছেলেও তার মতন এভাবে চাষের কাজ করে যাক সারা জীবন ধরে। শুভর বাবার অনেক স্বপ্ন ছেলে পড়াশোনা করে চাকরি করবে তার | মত খেটে মরবে না আজীবন।
কিন্তু ছেলের এই কান্ড দেখে শুভর বাবার তার নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়, সত্যিই | এইসব এক অন্যরকম আনন্দ।তার বাবা শুধু মুচকি হাসেন, কিন্তু কিছু বলতে পারেনা শুভকে তিনি তো আর শুভর ছেলেবেলার আনন্দ কেড়ে নিতে পারেন না। আর তাছাড়াও শুধু পড়াশোনা | করলেই তো হবে না, মানসিক, শারীরিক বিকাশও তো দরকার শুভর, কি তাই না ?
Leave a Reply