টিউশন শেষ করে রাস্তায় পা বাড়ালো শুভ্র। মাথায় তার বিরাট ভাবনা- মাসের শুরু, তবু হাতে টাকা নেই। টিয়াদের বাড়ি পড়াতে গিয়ে আজ নির্লজ্জের মত টিয়ার মাকে বলেই দিয়েছে।
“মাসিমা, মাইলেটা যদি একটু দেখতেন…..”
তাতেও মাইলে আর দেখা গেল কই। এবার শুভ্র কি করবো খিদেও পেয়েছে খুব। মানিব্যাগ খুলে দেখে পঞ্চাশ টাকা পড়ে আছে। খাওয়ার ইচ্ছাটা এখন তুলে রাখাই ভালো। সাত পাঁচ আর না ভেবে সার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় শুভ্র। একেতেই দেরি হয়ে গেছে, স্নেহা বোধ হয় অনেকক্ষন চলে এসেছে, অপেক্ষা করছে তার জন্য। হোস্টেলে থেকে | পড়াশোনা কবে শুভ্র। টিউশনি করিয়ে সেই টাকা থেকে খাওয়া-দাওয়া, হাত খরচা চালিয়। কিছুই দিতে পারেনা স্নেহাকে। স্নেহা বড়ো ঘরের মেয়ে, সে কি যে দেখল এই নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেটার উপর শুভ্র তা ভেবেও পায় না। রোজ স্নেহা কিছু না কিছু শুভ্রকে দেবেই, নিতে চায় না শুভ্র, তবুও দেবেই। সাত-পাঁচ ভাবার মধ্যেই শুভ | অনুভব করে তার হাত ধরে কেউ ঝাকাচ্ছে। নিচে তাকাতে দেখে একটা বছর আটেকের মেয়ে বলছে “একটা ফুল নাও না দাদা”। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে শুভ্র নিয়েই নেয় একটা সূর্যমুখীর তোড়া, স্নেহা সূর্যমুখী বড়ো | ভালোবাসে, খুব খুশি হবে ও।
যা ভেবেছিল ঠিক তাই, পার্কে ঢুকতেই শুভ্র দেখতে পায় স্নেহা এসে বসে আছে। শুভ্র গিয়ে স্নেহার পাশে বসল। স্নেহা | বাড়িয়ে দিল একটা টিফিন কৌটো।
শুভ্র বলল- কি এটা ?
পায়েস, খাসনি তো কিছু আজ সারাদিন ধরে।
·
তুই জানলি কী কবে যে আমি খাইনি?
সব জানতে হয় মশাই, খেয়ে নে না বকে। (খাইয়ে দেয় শুভ্রকে।)
খাওয়া শেষে ইতস্তত করতে করতে শুভ্র দিয়েই দেয় তার আলা ফুলের তোড়াটা
এই নে, দেখ পছন্দ হয় নাকি!
টাকা কোথায় গেলি?
ছিল আমার কাছে…
-তারমানে তুই কাল রাতে খাসনি? মিথ্যে বলেছিস আমায়।
কাল মুড়ি খেয়ে চালিয়ে দিয়েছি।
ঢাকা আমার দিকে, কি দরকার ছিল বলতো এসব আবার।
-সামর্থ্য নেই জানি, তবু দিতে তো ইচ্ছে করে। তুই সূর্যমুখী খুব ভালোবাসিস যে….
সে তো বাসি, তাই বলে এখনই দিতে হবে?
চাকরিটা পা শুধু, তারপর দেখ আমাকে দিতে হবে না আমি রোজ রোজ সূর্যমুখী,এটা-সেটা কিনে ঘর ভর্তি করব | আর তোর টাকা ধ্বংস করব।
( হেসে ফেলে শুভ্র… )
এখন এসব কিছুর দরকার নেই। তুই শুধু আমার সাথে থেকো আর পড়াশোনাটা মন দিয়ে কর, ঠিক আছে মশাই? (শুভ্রর মানিব্যাগটা নিয়ে তার মধ্যে একটা ৫০০ টাকার একটা নোট গুঁজে দিল স্নেহা।)
-কেন দিলি বলতো? রোজ রোজ কি ভালো লাগে তোর থেকে টাকা নিতে?
কে টাকা দিয়েছে! টাকা দিইনি, ধার নিলাম থার। চাকরি টা পা তারপর সব কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দেব সুদ | সহ। বুঝলে গো? শুভ্রের গাল দুটো টিপে) আমার কিউট, মিষ্টি, সূর্যমুখী-টা, তো আমার সাথে আছে ই আর কি চাই!
ভালোবাসা সুন্দর ই, কি বলিস?
(পরম মমতায় জড়িয়ে ধৰে স্নেহাকে; সব অভিমান, অভিযোগ, থামতি যেন এভাবেই মিটে যাচ্ছে, স্নেহাও গ্রন্থর মত যেন আষ্টেপৃষ্ঠে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁড়ো নিচ্ছে। )
Leave a Reply