Pitaar Rin

-Koyel Dey, BHM, 1st year, Techno India University


বাবার ঋণ:

বাবা, তুমি যা বলেছিলে, পিতার ঋণ শোধ করা কোনোদিনও সম্ভব নয়। তুমি সেই ২৮ বছরের জীবনে অনেক কিছু করেছো—আমার জীবনকে সাজাতে অগণিত রাত কাটিয়ে দিয়েছো, অসীম আত্মত্যাগ করেছো। তুমি হয়তো জানো না, কিন্তু আমি জানি, তুমি আগামীর দু’শ বছর পরেও একজন পূর্ণাঙ্গ পিতার প্রতিমূর্তি হয়ে থাকবে।

যদি তোমার মনের কথা বলতেই হয়, বাবা, আমি একটা গল্প বলতে চাই। তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে:

“তোমার মা যখন তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছিল, তখন আমার মাসিক আয় ছিল মাত্র আড়াই হাজার টাকা। সেই টাকায় সংসার চালানোর চেষ্টা করতাম, বুঝতেই পারো। তোমাকে যখন স্কুলে ভর্তি করি, তখন তোমার মা আর আমি জীবনের সবকিছু দিয়ে তোমার পড়াশোনার খরচ চালাতাম। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করলো, যখন তোমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলো। তার চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলাম, কিন্তু সেটা কোনো কাজে লাগলো না।”

এই গল্প আমি কখনো ভুলতে পারি না। বাবা, তুমি যেভাবে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছিলে, সেই স্বপ্নের দিকে ছুটতে শিখিয়েছিলে, তা কোনো মূল্য দিয়েও শোধ করা যাবে না। আজ আমি যা কিছু অর্জন করেছি, সবকিছু তোমার নিরলস পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের ফল।

তুমি আরও বলেছিলে: “জীবনে ১০০ টাকা রোজগার করলেও, তা যেন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হেসে খেলে খরচ করো না। টাকার মূল্য বোঝো।”

তুমি যখন আমাকে এসব শিখিয়েছিলে, তখনও আমি বুঝিনি জীবনের প্রকৃত অর্থ। কিন্তু আজ, যখন জীবনের বিভিন্ন দায়িত্বে নত হয়েছি, তখন বুঝি, পিতার ভালোবাসা আর ঋণ কোনোদিন শোধ করা যায় না।

বাবারা কখনো ক্লান্ত হয় না। বাবারা সবসময়ই নিজেদের সন্তানদের স্বপ্নপূরণের জন্য পথে দাঁড়িয়ে থাকেন। তুমি নিজেও তাই করেছো, বাবা। এই ঋণ শোধ করতে গিয়ে আমি বুঝেছি, সন্তানদের জন্য পিতার আত্মত্যাগ কেবল ভালোবাসার নয়, বরং এক অসমাপ্ত দায়বদ্ধতার গল্প।

আজ আমি জানি, আমার সমস্ত সফলতার পিছনে তোমার অবদান। তুমি স্বপ্ন দেখেছিলে, আর আমি সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই। কিন্তু, বাবা, তুমিও তো আমার স্বপ্নের অংশ ছিলে, তোমার স্বপ্নগুলো কোথায় হারিয়ে গেলো?

তোমার ঋণ শোধ করতে আমি সারাজীবন লড়ে যাবো, কিন্তু সেই ঋণ কখনো শেষ হবে না। কারণ পিতার ভালোবাসা কেবল রক্ত-মাংসে গড়া নয়, তা হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত।

তুমি যদি শুনতে পাও, বাবা, আমি শুধু বলতে চাই, পিতার ঋণ কখনোই শেষ হয় না।

“তবুও, পিতার ঋণ শোধ করতে হবে।”

ধন্যবাদ।