Ekti madhyabitta mitra paribarera golpa

- Arghyadeep Mitra, HM department, TIU

আমি অর্ঘ্যদীপ মিত্র, একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমাদের ছোট্ট পরিবারে আমি ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, আর আমার বাবা-মা এবং দু’জন দিদি আছেন। আমাদের পরিবারে ভালোবাসার কোনো অভাব নেই। শৈশব থেকে কোনো কষ্ট বা অপ্রাপ্তির অভিযোগ করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাবা-মা সবসময় চেয়েছেন যে, আমাদের কিছু কমতি না থাকে।

মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও আমাদের জীবনযাপন যথেষ্ট সহজ এবং সুন্দর ছিল। বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী, আর মা ঘর সামলাতেন। বাবা কখনও আমাদের কোনোকিছু চাওয়ার পরিমাপ করেননি। আমরা যখন যা চেয়েছি, বাবা তা কোনো না কোনোভাবে জোগাড় করে দিতেন। দিদিরাও আমাকে খুব ভালোবাসতো। অনেক সময় দিদিরা নিজেদের সাধ মেটানোর আগে আমার জন্য চিন্তা করত।

আমাদের বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর সময় ছিল, যখন আমরা একসাথে খেতে বসতাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমরা সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে বসতাম। খাবার শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য ছিল না, বরং সারাদিনের গল্প, হাসি, কান্না, দুঃখ-কষ্ট সবই একসঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সময় ছিল। একে অপরের কষ্ট শুনে কখনও কান্নায় ভেঙে পড়তাম, আবার একে অপরের সফলতার কথা শুনে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠতাম।

প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের পরিবারের জন্য বিশেষ ছিল। জীবনের প্রতিটি ছোট-বড় মুহূর্ত আমরা একসঙ্গে উপভোগ করেছি। বাবা-মা শিখিয়েছিলেন, জীবনের প্রতিটি ধাপেই লড়াই করতে হয়, কিন্তু সেই লড়াই একা নয়—সবাই মিলে করতে হয়।

কখনও কখনও মনে হতো, আমাদের পরিবারটা যেন কোনো রূপকথার গল্প। বাবা অফিস থেকে ফিরে আমাদের জন্য ছোটখাটো উপহার নিয়ে আসতেন, দিদিরা স্কুল থেকে ফিরে আমার সাথে গল্প করত, আর মা সারা দিন আমাদের সেবা করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও মুখে হাসি নিয়ে সবার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতেন।

আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, কিন্তু বাবা-মা সেই সীমাবদ্ধতাকে কোনো দিনই আমাদের সামনে প্রকাশ করেননি। যখন কোনো আর্থিক সংকট আসত, বাবা-মা সেটা নিজেদের মধ্যে সামলে নিতেন। তারা কখনও আমাদের সেই কষ্ট বুঝতে দেননি। আমরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, কিন্তু বাবা-মা সবসময়ই নিজেদের প্রয়োজনের আগে আমাদের কথা ভাবতেন।

আমাদের পরিবার একসঙ্গে বেড়াতে যেতেও ভালোবাসত। কোনো বড়লোকি হোটেল বা বিলাসবহুল ভ্রমণ আমাদের কখনও হয়নি। আমরা হয়তো গ্রামের কোনো আত্মীয়ের বাড়ি যেতাম বা শহরের বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতাম, কিন্তু সেই ছোট্ট ঘোরাঘুরিতেও আমরা এত আনন্দ পেতাম, যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমরাই।

আমি আজও সেই দিনের কথা ভুলতে পারি না। আমার পরিবার আমাকে শিখিয়েছে, কষ্ট যতই বড় হোক, একসঙ্গে থাকলে সব কিছু সহজ হয়ে যায়। বাবার কষ্ট, মায়ের লড়াই, দিদিরা তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন—সবকিছু মিলিয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের গল্পটাই অনন্য।

আজ আমি যখন নিজের ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, তখন সেই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো আমার মনকে শক্তিশালী করে তোলে। হয়তো আমরা মধ্যবিত্ত, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা আর ঐক্য কোনো কিছুর থেকে কম নয়।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের পরিবারের ভালোবাসা ও একতা ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই সময়গুলোতে আমি বুঝতে পারিনি, কিন্তু আজ যখন আমি বড় হয়েছি, তখন বুঝি বাবা-মা কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন আমাদের জন্য। আমাদের ইচ্ছেগুলো পূরণের জন্য তারা নিজেদের ইচ্ছেগুলো চাপা দিয়েছিলেন, নিজেদের চাহিদা ভুলে শুধু আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেছেন।

আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের গল্পটা হয়তো খুব সাধারণ, কিন্তু এই সাধারণ জীবনেই অসাধারণ কিছু মূল্যবোধ আছে। ভালোবাসা, ত্যাগ, সংগ্রাম, আর পারস্পরিক সহানুভূতির গল্পই আমাদের জীবনকে বিশেষ করে তুলেছে। 

এই গল্পটা শুধু আমার নয়, এই গল্পটা হাজার হাজার মধ্যবিত্ত পরিবারের।